Headlines
Loading...
পঞ্চায়েত সদস্যর ছেলেকে অপহরন খুন ঘটনায় জড়িতরা বিজেপির সমর্থক, বলে দাবী তৃণমূলের

পঞ্চায়েত সদস্যর ছেলেকে অপহরন খুন ঘটনায় জড়িতরা বিজেপির সমর্থক, বলে দাবী তৃণমূলের

 



আজাদ বার্তা, আব্বাস আলি ও আজিজুর রহমান, পূর্ব বর্ধমান গলসি:- তৃণমুলের পঞ্চায়েত সদস্যর নয় বছরের শিশুকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্মিকার বিজেপির। পাল্টা তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকে    দায়ী করে বিজেপি নেতৃত্ব।গত পরশু অপহরন হওয়া তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র সন্দীপ দলুইয়ের নিঁথর দেহ ডিভিডি সেচ ক্যনেলের লকগেট থেকে উদ্ধার করে গলসি পুলিশ। মুক্তিপন না মেলায় বুধবার রাতেই অপহরনকারীরা তাকে খুন করে বলে অভিযোগ করেন মৃতের মা গলসির সাঁকো গ্রামের মেটে পাড়ার বাসিন্দা শান্তনা দলুই। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধায় বাড়ির কাছে মনসা তলায় খেলা করছিল বছর ৯ এর সন্দিপ। তারপর রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ তাদের বাড়ির মোবাইলে সাতলক্ষ টাকা মুক্তি পন চেয়ে ফোন করে অপহরনকারীরা। সাত লক্ষ থেকে শেষ তিনলক্ষ টাকা চাওয়া হয়। অবশেষে সেই টাকা দিতে না পারায় সন্দিপের হাত পা বেঁধে জ্যান্ত জলে ফেলে দেয় ওই অপহরনকারী এমনই অভিযোগ তার। তার ফুলের মত শিশুকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করায় উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানান তিনি। তিনি বলেন, গত পরশুর ঘটনার পর থানায় অভিযোগ জানাই তার স্বামী বুদ্ধদেব দলুই। পুলিশ তদন্তে নেমে পাঁচ জনকে আটক করে। গতকাল রাত্রি দশটা নাগাদ তারা পুলিশের থেকে জানতে পারে, সন্দিপের হাত পা বেঁধে জ্যান্ত জলে ফেলে দিয়েছে তিন অপহরণকারী সুব্রত মাঝি ওরফে বাদশা, বয়স ২০, নিরঞ্জন বাগ, বয়স ২০। মঙ্গলদীপ দলুই, বয়স ১৮ বছর। তাদের সকলের বাড়ি সাঁকো গ্রামে। 
ছবি:-ডিভিসির জল থেকে তোলা হচ্ছে সন্দীপের মরদেহ

স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব মাঝি জানান, সন্দীপের খুনের ঘটনার পিছনে বড় কোন গ্যাঙ আছে। তাছাড়া সন্দীপের বাবা বুদ্ধদেব দলুই পঞ্চায়েত সদস্য। ফলে এর পিছনে অন্য কোন কারন থাকতে পারে। তিনি জানান, মুল চক্রী সুব্রত মাঝি ওরফে বাদশা জেসিবি সহ-চালক। তার বাবা চন্ডীচরন মাঝি সাঁকো পঞ্চায়েত প্রাক্তন উপপ্রধান ছিলেন। তাছাড়া মঙ্গলদীপ দলুই সন্দীপের নিকট আত্মিয় ও নিরঞ্জন বাগ স্থানীয় গ্রীল মিস্তি। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাদশা প্রনব খাঁ এর নামে নেওয়া সিম ব্যবহার করে মুক্তি পন চেয়েছিল। অর্থের লোভেই এমন কাজ করেছে বলে জানান তিনি। পুলিশ তদন্ত করছে। পরিবার প্রতিবেশীদের সাথে সাথে তিনিও ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমুলুক শান্তির দাবী জানিয়েছেন। 


সাঁকো পঞ্চায়েত সদস্য বুদ্ধদেব দলুই এর অভিযোগ, বাদশা মোটর বাইকে করে নিয়ে যায় সন্দীপকে। তাকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে মঙ্গলদ্বীপ। এদিকে অসিম খাঁ এর নামে নেওয়া একটি সিমকাড বাদশার কাছে থাকতো। সেই সিম ব্যবহার করে মুক্তিপন চেয়ে বুদ্ধদেব দলুই এর বাড়িতে ফোন করে বাদশা। তাদের কাছে চাওয়া হয় সাত লক্ষ টাকা। যখন বুদ্ধদেব ও তার স্ত্রী এত টাকা দিতে পারবো না জানাই। তখন বাদশা শাসানি দিয়ে বলে কাল ধান বিক্রি করা টাকা কোথায়। অবশেষে সবকিছু বেচে তিনলক্ষ টাকা দিতে রাজি হয় বুদ্ধদেব। ততক্ষণে পাড়াতে হৈচৈ পরে যায়। শুরু হয় খোঁজাখুজি। তারমধ্যেই অপহরনকারীরা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। বারবার ওই নং ফোন করা হলে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারেনি বুদ্ধদেব বাবু। 

এরপরই গতকাল তিনি বিষটি গলসি থানায় জানান। শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। তদন্তে নেমে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে তিনজন ওই ঘটনায় জড়িত আছে বলে জানতে পারে পুলিশ। এমনটিই জানিয়েছেন পরিবারের লোকেরা। তারপরই গতকাল রাত থেকে ডুবুরি এনে তল্লাশি চালানো হয় ডিভিডি সেচ ক্যানেলে। শুক্রবার সকালে লকগেটের কাছে মিলে সন্দীপের নিথর হাতপা বাঁধা দেহ। এখন ঘটনা মুখে মুখে রটে যাওয়ায় উত্তেজিত জনতা ভাংচুর চালায় অপহরন কারীদের বাড়ি। তিনটি বাড়িতে ভাঁঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। এমন নৃশংস ও পৈশাচিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ সন্দীপের পরিবার থেকে গোটা গলসি। 


এদিকে ওই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা। জড়িতরা বিজেপি সমর্থক বলে দাবী তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরীর। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা গত লোকসভা নির্বাচন বিজেপির হয়ে ভোটের প্রচারে কাজ করেছে। পাশাপাশি তিনি আরও দাবী করেন মৃতের বাবা বুদ্ধদেব দলুই এলাকায় তৃণমূলের জনপ্রিয় সদস্য। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই পরিকল্পিত ভাবেই খুন করেছে বিজেপি কর্মীরা।

বিজেপির, সদর জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চ্যাটার্জ্জী ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অভিযুক্তরা তাদের দলের কেউ নয়। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক। জয়দীপ বাবু পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কাটমানির টাকা ভাগ চেয়ে অপহরণ করেছে তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর লোকেরা। বাসুদেব বাবু ব্লক সভাপতির পদ হারিয়ে এখন উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছেন। গোষ্ঠী কোন্দল ঢাকতে পরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আমার মনে হয় এমন ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।

0 Comments: