আজাদ বার্তা পূর্ব বর্ধমান, সম্প্রতির অন্য নিদর্শন বর্ধমানের তালিতে। গ্রামের দুই মুসলিম পাড়াকে কবর দেওয়ার জন্য জায়গা দান করলেন গ্রামের মানবিক এক ব্রাহ্মণ কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। আর তাতেই খুশি গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। কয়েক দশক ধরে ওই জায়গায় কবর দেওয়া হলেও জায়গার মালিক ছিলেন কালীকৃষ্ণ বাবু। সেই নিয়ে জটিলতা ছিল দীর্ঘদিন। জটিলতা মেটাতে বছর খানেক পূর্বে বিনামূল্যে সেই জায়গা মুসলিমদের কবরস্থানের জন্য রেজিস্টি করে দেন তিনি।
জানা গেছে, বর্ধমান ১ ব্লকের তালিত গ্রামে হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের বাস বহুদিনের। গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ার মুসলিমদের কবর দেওয়ার জায়গা ছিলনা। করব দিতে যেতে হত অনেক দূরে। দুইপাড়ার মাঝে সাধু পুকুরের পাশেই বেশকিছুটা জমি ছিল গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের। সমস্যা সমাধানে তিনি ওই জায়গা বিনামূল্যে দান করেন। বেশকয়েক বছর আগে তিনি এই দান করলেও সম্প্রতি এই জায়গা নথিভুক্ত হয়েছে কবরস্থান হিসাবে। জমির নতুন পরচা বের হয়েছে এখন। এরপরই কবর স্থানে প্রবেশের মুখে দিন কতক আগে নামাজ পরার বাঁধানো জায়গাও নির্মান হয়েছে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে।
৮৮ বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কালীকৃষ্ণবাবু বলেন, ১ একর ৬ শতক জায়গাটি তার নামে ছিল। তবে তিনি সেটি মৌখিক ভাবে দান করেছিলেন কবরস্থান করার জন্য। কিছুদিন পূর্বে জায়গাটি কালীকৃষ্ণ বাবুর নামেই উল্লেখিত ছিল ভুমি রাজস্ব দপ্তরে। তাছাড়া পরচা ছিল তার নামে। এই নিয়ে জটিলতা ছিল দীর্ঘদিন তাই তিনি দেড় বছর পূর্বে ওই জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের গ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বহুদিন থেকেই আছে। তাকে কবরের জমি নিয়ে সমস্যার কথা জানায় গ্রামের দুই মুসলিম ব্যক্তি সেখ সরিফুদ্দিন, সেখ সাবেদ আলি। তারপরই তিনি ওই জমি আমি দান করে দেন। তার জায়গায় গ্রামের মানুষের শেষকৃত্য হচ্ছে এটা ভেবে আনন্দ হয় তাদ। তিনি বলেন এটাই আমাদের ঐতিহ্য হিন্দু মুসলিমের মেলববন্ধন। তিনি আরও বলেন, ওই জায়গা দেওয়ার পর গ্রামের সকল মানুষ তাকে ভীষণ সম্মান করে। একদিন ওরা বাড়িতে মিষ্টি দিতে এসেছিল। কিন্তু তিনি মিষ্টি নেননি। কারন মিষ্টিরও তো একটা মুল্য আছে।
গ্রামবাসীদের থেকে জানা গেছে, শুধু কবর স্থান নয়। গ্রামের রাস্তা তৈরীতেও জায়গা দান করেছেন কালীকৃষ্ণবাবু। গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ার মাঝে একটি রাস্তা করার জন্যও তিনি বাশ কিছুটা পুকুরের জমি দান করছেন। এর জন্যই নির্মান হয়েছে রাস্তা। কালীকৃষ্ণ বাবুর নিজেদের দুটি পুকুরের মাঝে কিছুটা জায়গা দিয়ে তিনি ওই রাস্তা তৈরির অনুমতি দিয়েছেন। ফলে তাঁর পুকুরের কিছুটা অংশ মাটি চাপা দিতেও হয়। বর্তমানে ওই রাস্তা নির্মানের ফলে দুই পাড়ার যাতায়াত সুবিধা হয়েছে।
কালীকৃষ্ণবাবুর নাতি সাহেব মুখোপাধ্যায় বলেন, তাদের গ্রামে হিন্দু মুসলিমে মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। দাদু গ্রামের মুসলিমদের কবর দেওয়া জন্য জায়গা দিয়েছেন। এটাতো তার গর্ব। পুজোতে গ্রামের মুসলিমরা তাদের বাড়িতে আসেন। আবার মুসলিমদের মহরমের ঢাল প্রতিবছর তাদের উঠানে যায়। বর্তমান ধর্মীয় অস্থিরতার সময় তাদের তালিত গ্রাম দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন সবকিছু ফেলে একদিন চলে যেতে হবে। ভাল কাজের জন্য মানুষ তাদের মনে রাখবেন। গ্রামের মুসলিমরা খুব ভাল তাদের নিয়েও গর্ব হয়।
কবরস্থানের জায়গা পেয়ে খুশি গ্রামের মুসলিম পাড়ার মানুষজন। কবর ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্য সেখ সরিফউদ্দিন বলেন, এখন কিছুটা জায়গা রেজিস্ট্রি হতে বাকি আছে। কিন্ত আমারা জায়গা ব্যবহার করছি। তবুও বারবার কালীকৃষ্ণবাবু আমাদের বারবার বলছেন, জায়গার কাগজ করে নিতে। কারন তিনি মারা গেলে সমস্যা হতে পারে। এর থেকেই বোঝা যায় তিনি কত উদার মনের মানুষ। এই রকম মানুষ যদি সারাদেশ তথা বিশ্বে ভরে যায় তাহলে সমাজটা অতিব সুন্দর হয়ে যাবে। বন্ধ হবে সাম্প্রদায়িক হানাহানি।




0 Comments: